24.4 C
Dhaka
March 18, 2025
News

‘আমরা রোহিঙ্গা, আমরা ভালো নেই’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে বাংলাদেশে সম্প্রতি চার লাখ নয় হাজার (জাতিসংঘের দেওয়া সর্বশেষ হিসাব) রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশেই তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হওয়ার পর পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা থাকা, খাওয়া, পোশাক, অপুষ্টিসহ অসংখ্য সমস্যার মধ্যে করছে মানবেতর জীবনযাপন। তাঁদেরই একজন ২৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আছন। কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া যুবক প্রতিবেশীকে চোখের সামনে খুন হতে দেখাসহ দুর্বিষহ শরণার্থী জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন আলজাজিরার প্রতিবেদককে। সেই প্রতিবেদন বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।

“রাখাইনে সহিংসতা শুরুর আগে আমি রাজ্যের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় পড়াশোনা করতাম। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে যেন সাহায্য করতে পারি, সে জন্য আমি ইংরেজি পড়তাম। আমি চাইতাম, রোহিঙ্গাদের সমস্যা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে। একটি মুদির দোকানও চালাতাম। কিন্তু আমি রাখাইনে খুব একটা ভালো ছিলাম না। কারণ, আমাদের সেখানে কোনো স্বাধীনতা ছিল না। অন্য দেশের কোনো পণ্য দোকানে রাখার অনুমতি ছিল না আমার। সেখানে এত বেশি বাধানিষেধ ছিল যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা আমাদের পক্ষে ছিল অনেকটাই অসম্ভব।

আমাদের গ্রামে যখন সামরিক বাহিনী ঢুকে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে, তখন আমাদের এক প্রতিবেশীর এই নিপীড়ন সহ্য হয়নি। সামরিক সেনাদের বিরুদ্ধে চাকু হাতে তিনি প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। আমার চোখের সামনে সেনারা তাঁকে গুলিতে হত্যা করে। সেনারা আমাদের ওপর বছরের পর বছর অত্যাচার করে আসছে। আমাদের পেটাত, চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করত, এখন সেনারা আমাদের গুলি করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সেখানে আমাদের থাকার উপায় ছিল না, নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।

বর্ণনা করার ভাষা নেই কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছি। আমি যা পড়ে আছি, এর বাইরে আমি মাত্র একটি লুঙ্গি সঙ্গে আনতে পেরেছি। কিন্তু আমি এখন সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি সেসব রোহিঙ্গার জন্য, যারা এখনো রাখাইনে রয়ে গেছে। তারা হয়তো জানেও না, তাদের কপালে কী আছে।

বাংলাদেশ আমরা কষ্টে আছি। এখানে আমাদের রাস্তার পাশে ঘুমাতে হয়। আর সেই মাটি ভেজা ও কাদাময়। আমরা প্রয়োজনীয় সাহায্য পাচ্ছি না। এখানে যে রোহিঙ্গারা রয়েছে, তাদের পরিমাণ অনেক বেশি। বাংলাদেশিরা আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে, কিছু প্রতিষ্ঠানও করছে। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের জন্য এই পরিমাণ সাহায্য আসলে কিছুই না।

তাই সারা বিশ্বের উচিত, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারি। বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। এখানকার (কক্সবাজার) স্থানীয় লোকজন আমাদের বলে, ‘আমরা রোহিঙ্গা’, ‘আমরা বার্মিজ’। আমরা রাখাইন রাজ্য থেকে এসেছি এবং আমরা সেটাকেই ধারণ করি।

বিশ্ববাসীর কাছে আমার অনুরোধ, মিয়ানমারে আমাদের অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে সাহায্য করুন। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারলে আমরাও পারব। আমরা তাদের মতোই জীবনযাপন করতে চাই। বৌদ্ধরা অনুসরণ করে বুদ্ধধর্ম, আমরা করব ইসলাম ধর্ম। আমরা কোনো ধর্মীয়বিরোধ চাই না।”

Related posts

রোনালদোর আশা পর্তুগাল কে বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ করবে ||

Lutfur Mamun

Rohingya News | Mayanmar army fires on fleeing Rohingya | রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গুলি |

Lutfur Mamun

শাকিব খান মায়ের সঙ্গে ভোট দিলেন

Lutfur Mamun

Leave a Comment