ইমরুল ও লিটন দাসের ব্যাটিং বাংলাদেশের সিরিজ জয়
প্রত্যাশিত যে ফলাফল সেটিই হয়েছে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিবরাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়েকে ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত করে টাইগাররা। প্রথম ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৪৬ রান তুলেছিল সফরকারীরা। জবাবে ইমরুল ও লিটন দাসের জোড়া অর্ধশতকে ৫.৫ ওভার (৩৫ বল) হাতে রেখেই ৩ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১৬তম দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে ১০ম সিরিজ জয়। অথচ এই সিরিজে দেশসেরা দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে না থাকায় কিছুটা শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এবার সিরিজ জিতে মাশরাফি বিন মর্তুজারা শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নামবেন প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে।
মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে হেসেখেলেই জিম্বাবুইয়েকে ২৮ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখেই সাগরিকায় দীর্ঘ ২ বছর পর সিরিজ জয়ের মিশনে নামে মাশরাফিরা। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ দল। তবে সেখানে সাকিব–তামিম ছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপে এ দু’জনকে ছাড়াই ফাইনাল খেলে আসায় ঘরের মাঠে অনেক বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মাশরাফিরা। কারণ ২০১৪ সালের শেষদিক থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৬টি দ্বিপক্ষীয় হোম সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। হারিয়েছিল জিম্বাবুইয়েকে, এরপর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর আবার জিম্বাবুইয়ে ও সর্বশেষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানকে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। টানা ছয় সিরিজ জেতার পর গিয়ে ইংল্যান্ডের কাছে ২০১৬ সালের অক্টোবরে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সেটিই ছিল বাংলাদেশের সর্বশেষ খেলা দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ। মাঝে আর দেশের মাটিতে কোন দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয়নি। এবার দেশের মাটিতে আবার সিরিজ জয়ের ধারায় ফিরল টাইগাররা। টানা দুটি ওয়ানডে সিরিজ জিতল। এটি সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ২৪তম ওয়ানডে সিরিজ জয়।
সাগরিকায় রাতের বেলা ভাল পরিমাণে শিশিরপাতের ব্যাপারটি আগেরদিনই ধরা পড়েছিল। এ কারণে টস জিতে এবার আগে জিম্বাবুইয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠান মাশরাফি। শুরুটা দারুণ করে দিয়েছেন তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তিনি ওপেনার অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে (১৪) সাজঘরে ফেরত পাঠান। এরপর সেফাস ঝুয়াও–ব্রেন্ডন টেইলর জুটি ৫২ রান যোগ করে বিপদ কাটান। ঝুয়াওকে (২০) ১২তম ওভারের শেষ বলে শিকার করে ব্রেক থ্রু দেন মেহেদী মিরাজ। তবে তৃতীয় উইকেটে টেইলর–শন উইলিয়ামস ৭৭ রানের জুটি গড়ে বড় একটি সংগ্রহের পথ দেখান। টেইলর ৭৩ বলে ৯ চার, ১ ছক্কায় ৭৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহর বলে। তবে সিকান্দার রাজাকে সঙ্গে নিয়ে উইলিয়ামস বিশাল একটি সংগ্রহ এনে দিচ্ছিলেন। ৪৭ রান করে সাইফউদ্দিনের বলে উইলিয়ামস এবং ৬১ বলে ৪৯ করা রাজা সাজঘরে ফেরার পর বাকিরা আর সুবিধা করতে পারেননি। আগের ম্যাচে ফিফটি পাওয়া অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন এদিন দুর্দান্ত বোলিং করে ৪৫ রানে নেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফি ১টি করে উইকেট নিলেও রান দেয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন দারুণ মিতব্যয়ী। তিন পেসারই ১০ ওভার করে বোলিং কোটা পূর্ণ করেন। মুস্তাফিজ ৩৫, মাশরাফি ৪৯ রান দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৪৬ রান করতে সক্ষম হয় জিম্বাবুইয়ে। মুশফিক তিনটি ক্যাচ নিয়ে ২০০ ডিসমিসালের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৮১ ইনিংসে কিপিং করে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডে ইসিহাসে বিশ্বের ১১তম উইকেটরক্ষক হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন মুশফিক। মার্ক বাউচার, এ্যালেক স্টুয়ার্ট, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও এ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর মুশফিক ৫০০০ রানের বেশি ও ২০০ ডিসমিসালের রেকর্ডও স্পর্শ করলেন।
জবাব দিতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলেই বিপদ এসেছিল। কাইল জারভিসের বলে আম্পায়ার রড টাকার ওপেনার লিটনকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউতে সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি। এরপর স্বরূপে আবির্ভূত হন লিটন, প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দেন। দেখে শুনে ইমরুলও পরিণত একটি ইনিংস উপহার দেন। উভয়ে অর্ধশতক পেয়ে যান আর কোন ভুলের ফাঁদে পা না দিয়ে। ২৪ ওভারে ১৪৮ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ টাইগারদের তাঁবুতে নিয়ে আসেন দু’জন মিলে। এশিয়া কাপ ফাইনালে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকানো লিটন আগের ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার আরেকটি সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে যেতেও ভুল করলেন। স্পিনার রাজাকে তুলে মারতে গিয়ে তিরিপানোর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তিনি ৭৭ বলে ১২ চার, ১ ছক্কায় ৮৩ রান করেন। এরপর উইকেটে এসে দলের ভারমুক্ত একটি সহজ অবস্থান থাকার পরও নবাগত ফজলে রাব্বি আবার শূন্য রান করেই রাজার বলে স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফেরেন। আগের ম্যাচে অভিষেকে ৪ বলে শূন্য করা রাব্বি এবার ৫ বল খেলে শূন্যতেই থেমেছেন। এরপর ইমরুল–মুশফিক জুটি দলকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে থাকেন। তারা ৫৯ রানের জুটি গড়েন। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রান করা ইমরুল টানা দ্বিতীয় শতকের কাছাকাছি পৌঁছে যান। তবে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৯০–এর ঘরে সাজঘরে ফিরেছেন। ১১১ বলে ৭ চারে করা দারুণ একটি নিñিদ্র ও পরিণত ৯০ রানের ইনিংসটির যবনিকা ঘটে রাজাকে তুলে মারতে গিয়ে। এরপর অবশ্য ভুল করেননি মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিক। ৩৫ বল বাকি থাকতেই তারা দলকে প্রয়োজনীয় ২৫০ রানে পৌঁছে দেন। ২৪ রানে অপরাজিত মিঠুন ৪৫তম ওভারের প্রথম বলে ঝুয়াওকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। মুশফিক ৫২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি ২৫ রান করতেই সাকিব–তামিমের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরমেট মিলিয়ে ১০ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ডও গড়েন। রাজা একাই ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয় কিছুটা বিলম্বিত করেছেন। তবে ঠিকই সহজ আরেকটি জয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।