দুর্দান্ত জয়ে সমতায় বাংলাদেশের,বাঁচা-মরার ম্যাচে স্বাগতিকরা জিতেছে ৩৬ রানে।
দুর্দান্ত জয়ে সমতায় বাংলাদেশের,বাঁচা-মরার ম্যাচে স্বাগতিকরা জিতেছে ৩৬ রানে।
২১১ রান তাড়ায় চার বল বাকি থাকতে ১৭৫ রানে গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম টি-টোয়েন্টির পর শিষ্যদের ক্যারিবিয়ানদের বলের গতি ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক নিল ম্যাকেঞ্জি। ম্যাচের আগে সৌম্য সরকার বলেছিলেন মাথা খাটিয়ে খেলার। দুটি পরামর্শই মেনে খেলল বাংলাদেশ, পেল আগে ব্যাটিং করে নিজেদের প্রথম দুইশ ছোঁয়া সংগ্রহ।
দেশের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম দুইশ রানের স্কোর। হলো মিরপুরে যে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
আগের ম্যাচে ১৩০ রানের লক্ষ্য ৫৫ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামর্থ্য ছিল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করার। তবে সেই ম্যাচের মতো এবার অতটা এলোমেলো বোলিং করেনি স্বাগতিকরা। দারুণ বোলিংয়ে সাকিব গড়ে দিলেন ব্যবধান। পেলেন আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের যোগ্য সহায়তা।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটনের ব্যাটে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। একটু সাবধানী ছিলেন তামিম, শুরু থেকেই উত্তাল ছিল লিটনের ব্যাট। প্রথম ৪ ওভারে দুই ওপেনার তুলেন ৪২ রান। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে ভাঙে জুটি। ১৩ রানে জীবন পাওয়া তামিম ফিরেন ১৫ রান করে।
দারুণ সব স্কুপ, ফ্লিক আর স্ট্রেইট ড্রাইভে দ্রুত এগোচ্ছিলেন লিটন। সৌম্য তাকে দেন দারুণ সহায়তা। দ্রুত জমে যায় জুটি। তাদের ব্যাটে একাদশ ওভারে তিন অঙ্কে যায় বাংলাদেশের রান।
বোলিংয়ে ফিরে এক ওভারে সৌম্য ও লিটনকে ফিরিয়ে দেন শেলডন কটরেল। কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের দুর্দান্ত এক ক্যাচে থামেন সৌম্য। ভাঙে ৬৮ রানের জুটি।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পাওয়া লিটন ফিরেন ৬০ রান করে। তার ৩৪ বলের ঝড়ো ইনিংসটি গড়া ছয়টি চার ও চারটি ছক্কায়। ডানহাতি এই ওপেনারের প্রথম ফিফটিও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
ক্রিজে এসেই ওশান টমাসকে উড়ানোর চেষ্টায় দ্রুত ফিরেন মুশফিকুর রহিম। ১০ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে পথ দেখান অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে ৪২ বলে ৯১ রানের জুটিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি।
আগের ম্যাচ যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করেন সাকিব। এসেই কটরেলকে টানা তিনটি চার হাঁকিয়ে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। পরে টমাসের এক ওভার থেকেও তুলে নেন তিনটি চার।
শেষের দিকে রানের গতি কিছুটা কমাতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ২ ওভার থেকে আসে মাত্র ১৬ রান। তাই আশা জাগিয়েও বাংলাদেশ ভাঙতে পারেনি টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
সিলেট দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে শুরু করেছিলে সাকিব। মিরপুরে দুই প্রান্তেই পেস দিয়ে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আঁটসাঁট বোলিং করা আবু হায়দার রনি হানেন প্রথম আঘাত। ফিরিয়ে দেন এভিন লুইসকে।
মুস্তাফিজুর রহমানের বলে টানা চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ডানা মেলেন শেই হোপ। তার সঙ্গে নিকোলাস পুরানের জুটিতে দ্রুত এগোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাঁহাতি পেসারের সেই ওভার থেকে আসে ২৪ রান।
সাকিবকে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে তার পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে ফিরেন পুরান। হোপ ঝড় থামান মিরাজ। আগের ম্যাচে এই অফ স্পিনারকে তুলোধুনা করেছিলেন সফরকারীদের ওপেনার। ডিপ মিডউইকেটে লিটনের হাতে ধরা পড়েন ১৯ বলে ৬ চারে ৩৬ রান করা হোপ।
দারুণ এক ওভারে দুই বাঁহাতি শিমরন হেটমায়ার ও ড্যারেন ব্রাভোকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে স্টাম্পড হয়ে ফিরেন ব্র্যাথওয়েট। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে বোল্ড করে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ পান সাকিব।
৬ ও ১৩ রানে জীবন পাওয়া রভম্যান পাওয়েল আবু হায়দারের এক ওভার থেকে তুলে নেন ২০ রান। ৪৮ রানে আবার জীবন পাওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে থামান মুস্তাফিজ। খরুচে বোলিং করা বাঁহাতি এই পেসার পরে বিদায় করেন বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া কিমো পলকে।
২১ রানে ৫ উইকেট নেন সাকিব। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক ব্যাটে-বলে নিজেকে মেলে ধরে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
আগামী শনিবার মিরপুরেই হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ২১১/৪ (তামিম ১৫, লিটন ৬০, সৌম্য ৩২, সাকিব ৪২*, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*; কটরেল ২/৩৮, টমাস ১/৪৩, ব্র্যাথওয়েট ০/৪৩, অ্যালেন ১/২৯, পল ০/৫৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.২ ওভারে ১৭৫ (লুইস ১, হোপ ৩৬, পুরান ১৪, হেটমায়ার ১৯, পাওয়েল ৫০, ব্রাভো ২, ব্র্যাথওয়েট ৮, অ্যালেন ০, পল ২৯, কটরেল ২*, টমাস ০; আবু হায়দার ১/৩৩, সাইফ ০/৪২, মুস্তাফিজ ২/৫০, সাকিব ৫/২১, মিরাজ ১/২৩, মাহমুদউল্লাহ ১/১)
ফল: বাংলাদেশ ৩৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান
সূএ:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর