অবিশ্বাস্য জয় কুশল পেরেরার ব্যাটে শ্রীলঙ্কার
কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বল। স্টিয়ার করে কিপারের পাশ দিয়ে বাউন্ডারি তুলে নিলেন কুসল পেরেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্টে শ্রীলঙ্কা পৌঁছে গেল লক্ষ্যে। দশম উইকেটে বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিতে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন বিস্ফোরক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ উইকেটে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। শেষ জুটির দৃঢ়তায় ৩০৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য পেরিয়ে যায় তারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ নিয়ে দ্বিতীয়বার টেস্ট জিতল শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালে জিতেছিল এই ডারবানেই।
প্রথম ইনিংসে ফিফটি পাওয়া কুসল পেরেরা উইকেটে জমে যান দ্বিতীয় ইনিংসেও। লড়াকু ব্যাটিংয়ে করলেন দারুণ সেঞ্চুরি। দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পথে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্রীলঙ্কার কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ।
টেস্ট ক্রিকেটে সফল লক্ষ্য তাড়ায় দশম উইকেটে রেকর্ড ৭৮ রানের জুটিতে বিশ্বর অবদান ৬ রান। লঙ্কান ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান খেলেন মহামূল্য ২৭ বল।
দশম উইকেট জুটিতে আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের ইনজামাম-উল-হক ও মুশতাক আহমেদের অধিকারে। ১৯৯৪ সলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচি টেস্টে দশম উইকেটে ৫৭ রানের জুটিতে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তারা।
কিংসমেডে শনিবার ৩ উইকেটে ৮৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা সফরকারীরা এগোয় সাবধানী ব্যাটিংয়ে। প্রথম ঘণ্টার শেষ দিকে ছোবল দেন ডেল স্টেইন। তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন ওশাদা ফার্নান্দো ও নিরোশান ডিকভেলাকে।
১১০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা লঙ্কানরা প্রতিরোধ গড়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুসল পেরেরার ব্যাটে। শর্ট বলের ফাঁদ সাবধানে এড়িয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান দলকে নিয়ে যান দুইশ রানে।
জমে যাওয়া জুটি ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠেন দু প্লেসি। বারবার বোলার বদলিয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান কেশব মহারাজ। বাঁহাতি স্পিনার এলবিডব্লিউ করে ডি সিলভাকে বিদায় করে ভাঙেন ৯৬ রানের জুটি।
৭৯ বলে ৬ চারে ৪৮ রান করে বিদায় নেন ডি সিলভা। পরের বলে দু প্লেসির হাতে ধরা পড়েন সুরঙ্গা লাকমল। বেশিক্ষণ টিকেননি লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ও কাসুন রাজিথা। শেষ ব্যাটসম্যান বিশ্ব ফার্নান্দো যখন ক্রিজে আসেন তখন ৮৬ রানে ব্যাট করছিলেন কুসল পেরেরা। জয়ের জন্য সফরকারীদের প্রয়োজন ছিল ৭৮ রান।
এক প্রান্ত আস্থার সঙ্গে বল ঠেকিয়ে যান বিশ্ব। অন্য প্রান্তে বোলারদের ওপর চড়াও হন কুসল পেরেরা। ১৪৬ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৬ সালে করা আগের সেরা ১১০ ছাড়িয়ে ছুটতে থাকেন সামনে। কমতে থাকে ব্যবধান।
চোটের জন্য এদিন মাঠেই নামতে পারেননি পেসার ভার্নন ফিল্যান্ডার। রাবাদা-স্টেইন-ডুয়ানে অলিভিয়ের-মহারাজের কেউ ভাঙতে পারেননি লঙ্কানদের দশম উইকেট জুটি। স্বাগতিকদের হৃদয় ভেঙে কুসল পেরেরা দলকে এনে দেন দারুণ জয়। এ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন টেস্টে জিতল শ্রীলঙ্কা।
২০০ বলে খেলা ১২ চার ও পাঁচ ছক্কায় খেলা অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংস ম্যাচ সেরার পুরস্কার এনে দেয় কুসল পেরেরাকে।
আগামী বৃহস্পতিবার পোর্ট এলিজাবেথে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৩৫
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৯১
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ২৫৯
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন শেষে ৮৩/৩) (লক্ষ্য ৩০৪) ৮৫.৩ ওভারে ৩০৪/৯ (ওশাদা ৩৭, কুসল পেরেরা ১৫৩*, ডিকভেলা ০, ডি সিলভা ৪৮, লাকমল ০, এম্বুলদেনিয়া ৪, রাজিথা ১, বিশ্ব ৬*; স্টেইন ২/৭১, ফিল্যান্ডার ১/১৩, মহারাজ ৩/৭১, রাবাদা ১/৯৭, অলিভিয়ের ২/৩৫, মারক্রাম ০/৪)
ফল: শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল পেরেরা