আলম খান, চাইলেন স্বাধীনতা পদক
একজন মুক্তিযোদ্ধা, সংগীতের সংগ্রামী মানুষ, পপ গানের পথ প্রদর্শক আজম খান বেঁচে থাকতেই ‘আজম খানের জন্য একুশে পদক চাই’ স্লোগানে দাবি উঠেছিল। সেই দাবি প্রতিবছর দীর্ঘশ্বাসে দগ্ধ হতো। তবে চলতি বছরে হলো প্রত্যাশার পূরণ। মরনোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন পপগুরু।
সংগীতের জন্য দেশের জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হচ্ছেন তিনি।
এই খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সংগীতাঙ্গনে বইছে আনন্দের হাওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজম খানের ভক্ত-অনুরাগীরা পপগুরুকে একুশে পদক দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। সংগীতাঙ্গনের তারকারাও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন গুরুকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ায়।
এদিকে ছোট ভাই আজম খানের একুশে পদক প্রাপ্তির খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান। তিনি আবেগতাড়িতও। জাগো নিউজকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভারী শোনালো তার গলা।
তিনি বললেন, ‘পপ গানের জন্য আজম খানের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্র। এটি আনন্দের খবর, অনেক গর্বেরও। সারা জীবন গানের সঙ্গে বসবাস করে গেল ও। নাম, যশ, অর্থ; কোনোকিছুর লোভেই কোনোদিন পড়েনি। খুব ভালো লাগতো যদি আমার ভাইকে নিজের হাতে এই পুরস্কারটি নিতে দেখতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আজম খানের সংগীত চর্চার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। তবে আমি মনে করি ওর স্বাধীনতা পুরস্কারও পাওয়া উচিত। আজম খান একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত বেশ কয়েকটি ভয়াবহ গেরিলা অভিযানে অংশ নিয়েছিলো সে।
জীবন বাজি রেখে শত্রুদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই করেছে। তার নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিলো বিখ্যাত সেই ‘অপারেশান তিতাস’। তার সহযোদ্ধাদের অনেকেই স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বলে শুনেছি। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান করবো আজম খানকে যেন স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাহলে তার বীরত্বগাঁথা অমরত্ব পাবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে গুরুত্ব পাবে।’
প্রসঙ্গত, আজম খানের পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশ (রেল লাইনের ওই বস্তিতে)’, ‘ওরে সালেকা-ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ ইত্যাদি।
আজম খান ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার মাদারটেকে সাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন। সুখের দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা ও এক পুত্রের জনক ছিলেন আজম খান। প্রথম সন্তানের নাম ইমা খান, দ্বিতীয় সন্তান পুত্র হৃদয় খান এবং তৃতীয় সন্তানের নাম অরণী খান। আজম খানের জীবদ্দশাতেই তার স্ত্রী মারা যান।
পপসম্রাট আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।