বিপিএল চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা তামিম নৈপুণ্যে
ব্যাট করতে নেমে ইটের জবাব পাটকেল দিয়ে দিচ্ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন রনি তালুকদার। তবে তিনি ফিরতেই পথ হারায় রাজধানীর দলটি। পরে মুড়ি মুড়কির মতো উইকেট হারিয়েছে ঢাকা। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৮২ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে সাকিব বাহিনী। এতে ১৭ রানের দুর্দান্ত জয়ে বিপিএল ষষ্ঠ আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। শূন্য রানেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অসাধারণ থ্রোতে রানআউটে ফিনিশ হন সুনিল নারাইন। দ্বিতীয় উইকেটে রনি তালুকদারকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠেন উপুল থারাঙ্গা। ক্রিজে সেট হওয়া মাত্রই ঘোরাতে শুরু করেন ছড়ি। একের পর এক বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে সাইফ-পেরেরা-মেহেদীদের ঘাম ঝরান তারা।
এতে দুরন্ত গতিতে ছোটে ডায়নামাইটসরা। তবে আচমকা থেমে যান দুর্দান্ত খেলতে থাকা থারাঙ্গা। ফেরার আগে ২৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৮ রানের নান্দনিক ইনিংস। থিসারা পেরেরার বলে দ্বাদশ খেলোয়াড় আবু হায়দার রনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এর আগে তালুকদারের সঙ্গে গড়েন শতরানের উড়ন্ত জুটি।
পরে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ওয়াহাব রিয়াজের বলে তামিমকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। সেই জের না কাটতেই এনামুল হকের অসাধারণ থ্রোতে রানআউট হয়ে ফেরেন রনি তালুকদার। এর আগে বইয়ে দেন রানের নহর। মাত্র ৩৮ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি।
রনি ফিরতেই পথ হারায় ঢাকা। এর রেশ না কাটতেই পেরেরার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন আন্দ্রে রাসেল। এতে চাপে পড়ে ডায়নামাইটসরা। এর মধ্যে রিয়াজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে কাইরন পোলার্ড ফিরলে চাপটা দ্বিগুণ হয়। এ পরিস্থিতিতে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারেননি শুভাগত হোম।
ফাইনালের জন্য যেন সেরাটা তুলে রেখেছিলেন তামিম ইকবাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রানের ফোয়ারা ছোটান তিনি। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে সাকিব-রাসেল-রুবেলদের করেন কচুকাটা। তাদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে তুলে নেন ঝড়ো সেঞ্চুরি। তার টর্নেডো ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ঢাকা ডায়নামাইাটসকে ২০০ রানের টার্গেট দেয় ইমরুল বাহিনী।
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের মেগা ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে কুমিল্লা। তবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুটা শুভ করতে পারেনি ইমরুলরা। সূচনালগ্নেই টুর্নামেন্টজুড়ে বল হাতে আগুন ঝরানো রুবেল হোসেনের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন ইনফর্ম এভিন লুইস।
পরে আনামুল হককে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন তামিম ইকবাল। ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন। ক্রিজে সেট হয়ে রীতিমতো তোপ দাগাতে শুরু করেন তারা। তবে হঠাৎই পথচ্যুত হন এনামুল। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ৩০ বলে ২ চারে ২৪ রান করেন তিনি। এর রেশ না কাটতেই ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটে কাটা পড়েন ফর্মে থাকা শামসুর রহমান।
তবে একপ্রান্তে তামিম শো চলেছেই। একের পর এক চার-ছক্কায় সাকিবদের চোখের পানি, নাকের জল এক করে ছাড়েন তিনি। মাত্র ৩১ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ড্যাশিং ওপেনার। এরপর আরো রূদ্রমূর্তি ধারণ করেন। হয়ে ওঠেন আরো বিধ্বংসী। পরের পঞ্চাশ করেন মাত্র ১৯ বলে। সব মিলিয়ে মাত্র ৫০ বলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েও থামেননি, টর্নেডো চলেছেই। তার সাইক্লোনে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৯ রানের পাহাড় গড়ে কুমিল্লা। তার ব্যাট থেকেই আসে দলের ৭০.৮% রান!
৬১ বলে ১৪১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তামিম। ১০ চারের বিপরীতে ১১ ছক্কায় এ হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। এটি বিপিএলে তার প্রথম সেঞ্চুরি। আর চলতি আসরে ষষ্ঠ। সবমিলিয়ে এটি বিপিএলের ১৮তম। এটি বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের স্কোর। এর আগে আছেন শুধু ক্রিস গেইল। গেল আসরে ১৪৬ রান করেন এ ক্যারিবীয় দানব। তার বিস্ফোরক ইনিংসে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে রংপুর রাইডার্স।
তামিমকে সঙ্গ দিয়ে ২১ বলে ১৭ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ইমরুল কায়েস। তবে দেশসেরা ওপেনারের সঙ্গে তার ১০০ রানের জুটিই কুমিল্লাকে বিশাল সংগ্রহ এনে দিতে মূল ভূমিকা রাখে। বল হাতে ঢাকার বোলারদের অবস্থা ছিল করুন। ১টি উইকেট পেতে সাকিব-রুবেল যথাক্রমে খরচ করেন ৪৫ ও ৪৮ রান। ১ উইকেট নিয়েই বিপিএল ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। তামিম ঝড়ের মধ্যে দৃঢ় ছিলেন সুনীল নারাইন। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে উইকেট না পেলেও মাত্র ১৮ রান খরচ করেন তিনি।