ব্যাংকগুলোর মূলধন ৫০০ কোটি করতে হচ্ছে
গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন-পুরনো সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা করতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলো সময় পাবে দুই বছর। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে অর্থনীতির পরিসর বাড়ছে। এ অবস্থায় গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষাসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার নিচে, তাদের আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকায় তা উত্তীর্ণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৯টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটি, বেসরকারি ব্যাংক ১০টি ও বিদেশি সাতটি ব্যাংক রয়েছে। বেসরকারির মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংক নতুন প্রজন্মের।
৫০০ কোটি টাকার নিচে মূলধনের তালিকায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক, বেসরকারি উত্তরা ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩৭৬ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা এবং উত্তরা ব্যাংকের রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার নিচে থাকা অন্য ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ৪০০ কোটি টাকা, বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১৯৯ কোটি টাকা, সীমান্ত ব্যাংকের ৪০০ কোটি, এনআরবি গ্লোবাল ৪২৫ কোটি, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ৪৩২ কোটি, মধুমতি ৪৫২ কোটি, মেঘনা ব্যাংকের ৪৭০ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪৯০ কোটি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ৪৯৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সবচেয়ে কম পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। ব্যাংকটির মূলধনের পরিমাণ ২৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) ৩০৯ কোটি, উরি ব্যাংকের ৪২৮ কোটি টাকা, হাবিব ব্যাংকের ৪৩১ কোটি, ব্যাংক আল-ফালাহর ৪৪৫ কোটি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৪৪৫ কোটি এবং সিটি ব্যাংক এনএরের ৪৮৩ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।
পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি রয়েছে। এছাড়া প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে ফান্ড বাড়ানো দরকার। এজন্য মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে থাকলে এটিকে ইতিবাচক মনে করছি।
মূলধন বাড়াতে গিয়ে এ খাতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এ বাড়ানো ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে রাইট শেয়ার ইস্যু করা বা আইপিওর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো যাবে। এছাড়া যারা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক তাদের ব্যবসায়ী মূলধন জোগান দিতে সমস্যা হবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক হবে। এতে অর্থ পাচার রোধ হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের সরবরাহ করা অর্থ হলো ‘পরিশোধিত মূলধন’ বা ‘পেইড আপ ক্যাপিটাল’। ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন কত হবে তা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশে বেসরকারি ব্যাংক চালু হয় আশির দশকে। ওই সময় ব্যাংক করতে পরিশোধিত মূলধন লাগতো ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন নয়টি ব্যাংকের অনুমোদনের সময় তাদের জন্য পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সর্বশেষ নতুন তিনটি ব্যাংক ‘বেঙ্গল কমার্শিয়াল’, ‘দ্য সিটিজেন’ ও ‘পিপলস ব্যাংক’র সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে বর্তমান অর্থনীতির আকার, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় তিনটি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করতে শর্ত দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে তাদেরও পর্যায়ক্রমে ৫০০ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা বা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এদিকে ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ (০.৬২%) হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।