24.4 C
Dhaka
June 28, 2025
International Sports

ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু

ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু

ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু

কল্পনাতীত জয়।  সত্যি? নাকি কোনো বিভ্রম! ইতিহাসে নতুন আলোয় ভরিয়ে দিয়ে, ক্রিকেটীয় রূপকথায় নতুন অধ্যায় লিখল বাংলাদেশ।

জেপি ডুমিনি যখন মুস্তাফিজুর রহমানের বলে আউট হলেন, তখন থেকে শঙ্কার মেঘ কেটে গেল। এর আগ পর্যন্ত ‘কালো মেঘ’ জমে ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। অন্ধকার থেকে আলোতে আসতেই পাল্টে গেল সব। বাকি সময়টা হাসিখুশিতেই কাটল। ওভালে  দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ।

বারবার রং পাল্টানো ম্যাচে কত কিছুই না হলো। পুরো ম্যাচই ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। পরতে পরতে রোমাঞ্চ ছড়ানোর পর সাফল্যের নতুন রূপকথা লিখল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে এর আগেও বিশ্বকাপে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা ২০০৭ সালে। আন্ডারডগ হিসেবে প্রোটিয়াদের হারানোর পর অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। এবারও ফেবারিট ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। র‌্যাঙ্কিং, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে ফাফ ডু প্লেসির দল সবকিছুতেই এগিয়ে। কিন্তু বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সব হিসাব পাল্টে দিল বাংলাদেশ।

ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু
ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়ানডে ক্রিকেটে ‍নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৩০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর সাকিব ও মুশফিকের দায়িত্বশীল ফিফটি। এরপর শেষটা রাঙান মাহমুদউল্লাহ। দলগত ব্যাটিং পারফরম্যান্সে রানের চূড়ায় পৌঁছে দল। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে কথা বলেনি। বোলারদের বাজে দিনে ব্যাটসম্যানরা এগিয়ে আসেন।  মার্করাম, ফাফ ডু প্লেসি, ডুসেনের পর জেপি ডুমিনি। প্রত্যেকেই থিতু হয়ে রান করেছেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি।  অন্যদিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন ধ্রুপদী।  ফিল্ডিং নড়বড়ে হলেও বোলারদের দিনে সবকিছুই গেছে বাংলাদেশের পক্ষে। তাতেই আসে দুর্দান্ত জয়। বড় লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ৩০৯ রানে।

ম্যাচের আগেই ওভাল হয়ে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সমর্থন জানাতে চলে আসেন ওভালে। পুরো মাঠেই ছিল লাল-সবুজের দাপট। মাঝে মাঝেই দেখা গেছে ‘বাংলাদেশ-ওয়েব’।  বিভিন্ন স্থান থেকে ভেসে আসছিল হর্ষধ্বনি। ম্যাচ শেষে তা হয়ে উঠে বাঁধভাঙা উল্লাস।

রোববার সকালে টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতে পারেননি দুই পেসার রাবাদা ও এনগিডি। দুই ডানহাতি পেসারের বিপরীতে বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন দুর্দান্ত। শুরু থেকেই আগ্রাসন দেখিয়েছেন সৌম্য। তামিম ছিলেন ধীরস্থির। তবে তার ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দিতে ভুল করেননি সৌম্য। এনগিডির করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে দারুণ ফ্লিকে চার মেরে শুরু সৌম্যর। ওই পেসারের তৃতীয় ওভারে তিন চার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। পরপর দুই শর্ট বলে দুই বাউন্ডারি মিড উইকেট দিয়ে। শেষটা বেরিয়ে যায় দুই স্লিপের মাঝ দিয়ে।

সৌম্যর চার বাউন্ডারিতে রানের চাকা ঘুরলে তামিম কিছুটা রয়ে শয়ে খেলছিলেন। প্রথম বাউন্ডারি পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ২২ বল পর্যন্ত। সপ্তম ওভারের শেষ বলে তামিমের আরেকটি চারে বাংলাদেশের স্কোর পৌঁছে যায় পঞ্চাশে। লড়াইয়ে ফিরতে প্রোটিয়াদের দরকার ছিল উইকেট। নড়বড়ে তামিমকে নিজের প্রথম ওভারে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের স্বস্তি দেন ফিকোয়াও।  তবে সৌম্য থেমে থাকেননি। সঙ্গী হারানোর পরও হাতখুলে রান পাচ্ছিলেন। কিন্তু মরিসের শর্ট বলে তাকেও ফিরতে হয়।  ৩০ বলে ৪২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন এই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান।

পরের চিত্র্যনাট্য সাকিব ও মুশফিকের দখলে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৪২ রানের জুটি গড়ে তারা প্রোটিয়াদের আক্রমণ লণ্ডভণ্ড  করে দেন। যেভাব চাচ্ছিলেন সেভাবেই রান পাচ্ছিলেন তারা।  উইকেটের চারপাশে বাহারি সব শটে দুজনই ছিলেন দুর্দান্ত। বিরতির পর ১৬তম ওভারে সাকিবের শুরুটা ছিল অসাধারণ। মরিসের প্রথম বলে দুই রানের পর দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা, বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম।  ওই ওভারের শেষ বলে মুশফিকের ব্যাটে এক রানে বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে শতরান। ঠিক ৩২তম ওভারে বাংলাদেশের রান ২০০।

মাঝের সময়টায় দুজন ব্যাট হাতে শাসন করেছেন বোলারদের। ৯৫ বলে তাদের জুটি শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করে। এর আগে সাকিব ৫৪ বলে তুলে নেন বিশ্বকাপে তার ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করা মুশফিক ৫২ বলে পৌঁছান বিশ্বকাপে পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরিতে। দল যখন দুজনের থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশায় তখন হঠাৎ ছন্দপতন।  সাকিব নিজের জার্সির ডিজিটে ফেরেন ৭৫ রানে। মুশফিক আউট হন ৩ রান বেশি করে।  লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ৮৪ বলে ৭৫ রান করা সাকিব।  মুশফিক ফিকোয়াওকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৭৮ রানে। মাঝে মিথুন ২ চার ও ১ ছক্কায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে থামান শততম ওয়ানডে খেলতে নামা তাহির।

ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা যে ধারাবাহিকতায় রান তোলেন, লেট অর্ডারে সেই ধারা ধরে রাখেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক। ৪১ বলে তাদের ৬৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় রানের চূড়ায়।  সাব্বিরের পরিবর্তে ও বাড়তি অফ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক নিজের সুযোগটি ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে ৪ বাউন্ডারিতে ২০ বলে তুলে নেন ২৬ রান। মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন।  রাবাদার করা শেষ ওভারে ১৪ রান তুলে মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ বাংলাদেশের রানকে নিয়ে যান ৩৩০-এ। ৩৩ বলে ৪৬ রান তুলে মাহমুদউল্লাহ দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। ১ চারে মিরাজও রাখেন অবদান।

দক্ষিণ আফ্রিকা লুঙ্গি এনগিডির বোলিং মিস করেছে ৪ ওভার পর।  প্রথম স্পেলে ৩৪ রান ব্যয়ের পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাঠে ফেরেননি এই পেসার। রাবাদা ৫৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ক্রিস মরিস ছিলেন সবচেয়ে ব্যয়বহুল। ৭৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এ ছাড়া ফিকোয়াও এবং তাহিরও পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।

বোলিংয়ের শুরুতে বাংলাদেশ ব্রেক থ্রু না পেলেও দুই প্রোটিয়া ওপেনারের ভুল বোঝাবুঝিতে সাফল্য আসে। মিরাজের বলে ডি কক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। মুশফিকের গ্লাভস ফাঁকি দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। রান নিতে গিয়ে ওই মুশফিকের থ্রোতে রান আউট ডি কক।  মার্করাম ও ডু প্লেসি ব্যাটিং দ্যুতি ছড়িয়ে দলকে শতরানের স্বাদ দেন ১৯তম ওভারে। এ সময়ে সাকিব, মিরাজ, মাশরাফি সবাই চেষ্টা করেও জুটি ভাঙতে পারেননি।

সাকিব বুদ্ধি খাটিয়ে প্রান্ত বদল করে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই পান সাফল্য। মার্করামকে বোল্ড করেন ৪৫ রানে। এ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। ভয় ধরাচ্ছিলেন ডু প্লেসি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর বোলারদের ওপর চেপে বসছিলেন। জয়ের জন্য তাকে ফেরানোর দরকার ছিল। কাজের কাজ করে দেন মিরাজ।  বিশ্রাম নিয়ে ফিরে ডু প্লেসিকে বোল্ড করেন এই অফ স্পিনার। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ৬২ রানে বোল্ড হন প্রোটিয়া অধিনায়ক।

এরপর ডুসেন ও মিলার জুটি গড়েন। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ডুমিনিও।  কিন্তু বোলারদের আক্রমণে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ তারা।  সৌম্যর হাতে জীবন পাওয়ার পর মিলার (৩৮) ফেরেন মুস্তাফিজের বলে পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে।  ডুসেন (৪১) সাইফউদ্দিনের বল ক্রস খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। প্রোটিয়াদের শেষ ভরসা ছিলেন ডুমিনি।  মুস্তাফিজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ডুমিনি। সেখান থেকে ফিরে দারুণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান তিনি।  কিন্তু তাকে ফেরানোর দায়িত্ব নেন ওই মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনেন ৪৫ রান করা ডুমিনি। সেখানেই শেষ। পরের ব্যাটসম্যানরা পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র।

ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু
ICC World Cup 2019 ,বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দিয়ে শুরু

ব্যাটিং ভালো করার পর বোলিংয়ে ১ উইকেট নিয়ে সাকিব হয়েছেন ম্যাচসেরা।  এ ছাড়া মুস্তাফিজ ৩টি, সাইফউদ্দিন ২টি, মিরাজ ১টি উইকেট পেয়েছেন।

ব্যাট-বলের উত্তাপ ছড়াল। দুই দলই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ ছিল একধাপ এগিয়ে। তাইতো শেষ হাসিটা হেসেছে তারাই।  বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুতে আত্মবিশ্বাস ছড়ানো এমন জয়ে অনেক কিছু পেয়েছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিথুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫*; এনগিডি ০/৩৪, ০/৫৭, ফিকোয়াও ২/৫২, মরিস ২/৭৩, মার্করাম ০/৩৮, তাহির ২/৫৭, ডুমিনি ০/১০)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮ (ডি কক ২৩, মার্করাম ৪৫, ডু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ডুসেন ৪১, ডুমিনি ৪৫, ফিকোয়াও ৮, মরিস ১০, রাবাদা ১৩*, তাহির ১০*; মুস্তাফিজ ৩/৬৭, মিরাজ ১/৪৪, সাইফউদ্দিন ২/৫৭, সাকিব ১/৫০, মাশরাফি ০/৪৯, মোসাদ্দেক ০/৩৮)

ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।

Related posts

জনসনের বেবি শ্যাম্পুতে ‘ক্ষতিকর উপাদান’

Lutfur Mamun

Corona virus update and latest news || Sunday, July 26, 2020

Lutfur Mamun

কপিল শর্মার বিয়ে পুরোটাই লোক দেখানো

Lutfur Mamun

Leave a Comment