মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসকে এড়াতে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় জরুরি অবস্থাই ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প টিভিতে সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় বলেন, মেক্সিকো থেকে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে মাদক, অপরাধী এবং অবৈধ অভিবাসীর ঢল ঠেকিয়ে দেশকে সুরক্ষিত রাখতেই তিনি জরুরি অবস্থার আদেশে সই করছেন।
সীমান্তের ওই পরিস্থিতিকে জাতীয় নিরাপত্তায় অনেক বড় হুমকি উল্লেখ করে ট্রাম্প তা ঠেকাতে ‘দেয়াল কাজে আসবে’ বলে দাবি করেন। জরুরি অবস্থা জারির ফলে ট্রাম্প সামরিক কিংবা দুর্যোগ খাতের মতো বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ দেয়াল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিতে পারবেন।
অবৈধ অভিবাসন রুখতে সীমান্তে ‘যে কোনো মূল্যে’ স্থায়ী বেড়া নির্মাণ ছিল ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। নির্মাণ কাজ শুরু করতে চলতি বছর কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলারও চেয়েছিলেন তিনি।
ডেমোক্রেটদের সঙ্গে এ নিয়ে মতদ্বৈততায় গত বছরের শেষ থেকে টানা ৩৫ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের এক চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থায় ‘অচলাবস্থা’ দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আরেক দফা অচলাবস্থা এড়াতে কংগ্রেস সদস্যরা দেয়ালের জন্য ১৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিতে সম্মত হলেও তা ট্রাম্পের মনমত হয়নি।
এ কারণেই তিনি জরুরি অবস্থা জারির নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যাকে ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’ এবং ‘বেআইনি কাজ’ বলে বর্ণনা করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।
বিবিসি জানিয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে একটি ব্যয় বিলেও ট্রাম্পের সই করার কথা রয়েছে।
জরুরি অবস্থা জারির ফলে প্রেসিডেন্টের হাতে কিছু বিষয়ে অগাধ ক্ষমতা চলে এল যা ব্যবহার করে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটাতে পারবেন।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প সামরিক খাতের নির্মাণ প্রকল্পের ৩৬০ কোটি ডলার, মাদকবিরোধী প্রকল্পের ২৫০ কোটি ডলার, এবং ট্রেজারি বিভাগের ৬০ কোটি ডলার দেয়াল নির্মাণে বরাদ্দ দিতে পারবেন। আর এর সঙ্গে যোগ হবে বৃহস্পতিবার রাতে কংগ্রেসের পাস করা ১৩৭ দশমিক ৫ কোটি ডলারের প্যাকেজ।
সব মিলে দেয়াল নির্মাণের জন্য ট্রাম্পের হাতে চলে আসবে প্রায় ৮শ’ কোটি ডলার। যদিও সীমান্তের ২ হাজার মাইল জুড়ে দেয়াল নির্মাণের মোট খরচ ২ হাজার ৩শ’ কোটি ডলারের তুলনায় এ তহবিল অনেকটাই কম।
ট্রাম্পের দাবি, মেক্সিকো সীমান্তের বর্তমান অবস্থাই ‘জরুরি অবস্থা’ জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। গত নভেম্বরে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ওই সীমান্ত থেকে হয় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, নয়তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে ট্রাম্প সমর্থকরা সীমান্ত পরিস্থিতিকে ‘চরম সংকটপূর্ণ অবস্থা’ অ্যাখ্যা দিলেও তাদের সঙ্গে একমত নন ট্রাম্পবিরোধীরা।
তাদের মতে, দশককাল আগেও একবার একইরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেবার হন্ডুরাস ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিদিনই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মার্কিন সীমান্তে ভিড় করেছিল। তখন জরুরি অবস্থা জারি না করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলে তা এখনও সম্ভব।