খুলনা আঘাত হানবে শুক্রবার সন্ধ্যায়, মোংলা-পায়রা ৭ নম্বর সংকেত
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ক্রমেই শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে আরো এগিয়ে আসতে থাকায় বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দর ও পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া কার্যালয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার আগারগাঁওস্থ আবহাওয়া কার্যালয় থেকে সর্বশেষ আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, একইসঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৬.০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। ঘূণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়াসহ তা ১৮০ কিলোমিটার বেগে বইছে।
এটি আরো ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এবং পরে সন্ধ্যা নাগাদ উড়িষা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আজ সকাল ৯টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
উপকূলীয় জেলায় সাত নম্বর বিপদ সংকেত
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
৪-৫ ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ও অমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বলে আবহাওয়ার সবশেষ বার্তায় জানানো হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে। সিপিপির (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) হেডকোয়ার্টার এবং উপকূলীয় ১৯টি জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাঁরা প্রস্তুতি রেখেছেন। সিপিপির ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাঁরা প্রস্তুত আছেন।
স্বেচ্ছাসেবকরা এরই মধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব জেলার প্রশাসকদের কাছে ২০০ মেট্রিকটন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে পাঁচ লাখ করে টাকাও দেওয়া হয়েছে। ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্যালাইনের জন্য সুপেয় পানির ট্রাক পাঠানো হয়েছে।