ড. মাহফুজুর রহমান। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান। এটিএন নিউজেরও চেয়ারম্যান তিনি। একসময় তিনি ছিলেন সফল পোশাকশিল্প (গার্মেন্ট) ব্যবসায়ী। একাধিকবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও পেয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল এটিএন বাংলা পেয়েছে এমি অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার। গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি। এবার ঈদুল আজহায় এটিএন বাংলায় সম্প্রচারিত তাঁর একক সংগীতানুষ্ঠান ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক সফল্য, গানের জগতে নিজেকে জড়ানো এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘এটিএন বাংলা’ সম্প্রতি ২১ বছরে পা রেখেছে। কোন অনুপ্রেরণা থেকে আপনি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল করার উদ্যোগ নিলেন?
ড. মাহফুজুর রহমান : আমি প্রধানত গার্মেন্ট (তৈরি পোশাক রপ্তানি) ব্যবসা করতাম। এখনকার মতো ওই সময় বাংলাদেশে ভালো কাপড় তৈরি হতো না। উন্নতমানের কাপড় আমরা এখানে পেতাম না। সে কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের কাপড় কিনতে হতো। আমাকে প্রতি মাসে কাপড় কিনতে বোম্বেতে (ভারতের মুম্বাই) যেতে হতো। বোম্বেতে কাপড় আমদানির জন্য যে ব্যক্তি আমাকে হেল্প করতেন, তিনি একদিন আমাকে বললেন, ‘চলো, তোমাকে জিটিভি অফিসে নিয়ে যাই।’ তখন ভারতে মাত্র তিন-চারটা টিভি চ্যানেল ছিল। এটিএন মিউজিক নামেও একটি চ্যানেল ছিল। মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই) ছিল সানটিভি। যাই হোক, জিটিভি দেখতে গেলাম। দেখার পর আমি চিন্তা করলাম, বাংলাদেশে এ রকম চ্যানেল আমরা কেন করতে পারব না?
অন্যদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য প্রায়ই আমাকে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে হতো। আমি হোটেলে থাকতাম। ইতালি ও জার্মানিতে গিয়ে দেখলাম, সেখানকার টিভি চ্যানেলগুলো তাদের নিজস্ব ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সে ভাষা আমি বুঝতাম না। কাজ শেষে হোটেলে গিয়ে ঘুমানো ছাড়া কিছুই করার থাকত না। বিদেশি ভাষার টিভি কি দেখা যায়? তখন আমি চিন্তা করলাম, আমরা যদি বাংলা ভাষায় একটা চ্যানেল করতে পারি এবং সেটা যদি পৃথিবীর সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারি, তাহলে তো আমরাও বিদেশে বসে বাংলা টিভি দেখতে পারব।
আরেকটা বিষয় ছিল, স্যাটেলাইট টিভি কীভাবে করতে হয়, এ বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিল না। পরপর কয়েকবার বোম্বেতে জিটিভির অফিসে আমি গেলাম। এরপর তাঁদের একজনকে বললাম, ‘ভাই, তোমাদের এখানে আমি অনুষ্ঠান চালাতে চাই।’ জিটিভি আমার প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হলো। কিন্তু কিছুদিন পরে তারা আমাকে জানিয়ে দিল, তাদের ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাইরের অনুষ্ঠান জিটিভিতে চালাতে দেওয়া হবে না।
এরপর আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে বলল, ‘চলো, তোমাকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাই। দেখ, তুমি চেষ্টা করো, কিছু হয় কি-না।’ সে আমাকে বোম্বের ‘এটিএন মিউজিক’ চ্যানেল অফিসে নিয়ে যায়। সিদ্ধার্থ শ্রীবাস্তব নামের এক ভদ্রলোক তখন চ্যানেলটা চালাতেন। আমরা তাঁকে ভালোভাবে বুঝিয়ে এটিএন মিউজিক চ্যানেলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা—এই এক ঘণ্টা একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের অনুমতি নিলাম। তাঁরা অনেক টাকা ডিমান্ড করেছিল। শুরুতে ওই এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান চালানোর জন্য আমাকে এক লাখ ডলার দিতে হয়েছিল।
তখন আমার কাছে অল্টারনেটিভ কিছুই ছিল না। আমাদেরও অনেক লস (ক্ষতি) হয়েছে। এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে এক লাখ ডলার খরচ করে সেই অর্থ তুলে আনা সম্ভব ছিল না। তারপরও দেশপ্রেম থেকে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিলাম। অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেটাকে বেটা ক্যাসেট করে হংকংয়ে পাঠাতাম। বোম্বেতে তারা ওই অনুষ্ঠান প্রচার করত না, হংকং থেকে সম্প্রচার করত।