ধোনি মাঠে ঢুকে খেলা থামিয়ে দিলেন
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় বা ক্ষমতাধর ক্রিকেটারের নাম জিজ্ঞেস করা হলে আসবে গুটিকতক নাম। যার মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবে শচিন টেন্ডুলকারের নাম। তবে বর্তমান দলে সবচেয়ে ক্ষমতাধর কে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে মহেন্দ্র সিং ধোনি ব্যতীত দ্বিতীয় নামটি উচ্চারণ করারও সাহস পাবে না কেউ।
ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি হলেও, মাঠে যখন ধোনি থাকেন তখন কোহলিকেও মনে হয় সহ-অধিনায়ক। কেননা পেছনে থেকে ছায়া অধিনায়কের মতো সব কার্য সম্পাদন করে থাকেন মূলত ধোনিই। ক্রিকেট মাঠে তার দাপট যে ঠিক কতোটা তা আবারও প্রমাণ মিললো বৃহস্পতিবার রাতে আইপিএলের ম্যাচে।
ঘটনা ম্যাচের শেষ ওভারের। জয়পুরের মানসিং স্টেডিয়ামে স্বাগতিক রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচটিতে তখন টানটান উত্তেজনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকে জয়ের জন্য করতে হবে ৬ বলে ১৮ রান, আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উইকেটে রয়েছেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই।
বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে অধিনায়ককে সাহস জোগান বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা। পরের বলে ওভারস্টেপিং করে বসেন স্টোকস। এক রান নিয়ে সমীকরণটা ৫ বলে ১০ রানে নামিয়ে নেন জাদেজা। তবে ফ্রি হিট বলটি কাজে লাগাতে পারেননি ধোনি।
সন্তুষ্ট থাকতে হয় ২ রান নিয়েই। তবু সমীকরণ ৪ বলে ৮ রান থাকায় জয়ের পাল্লা তখন চেন্নাইয়ের দিকেই ভারী। কিন্তু পরের বলেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান স্টোকস। অসাধারণ এক ইয়র্কার সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন ধোনিকে। তিন বলে বাকি থাকে ৮ রান।
তখনই ঘটে ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি। শেষ তিন বলের জন্য উইকেটে আসেন মিচেল স্যান্টনার। এবার কোমরের ওপরে ফুলটস করে বসেন স্টোকস। তবে বলের গতি কম থাকায় স্যান্টনারের পাশাপাশি বিভ্রান্ত হয়ে যান মূল আম্পায়ার উল্লাস গান্ধে।
তিনি হাত বাড়িয়ে জানিয়ে দেন এটি উচ্চতার কারণে নো বল। কিন্তু লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড আবার তাকে থামিয়ে বলেন এটি নো বল নয়। সে বল থেকে ২ রান নেন স্যান্টনার, সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ৬ রানে।
কিন্তু দুই আম্পায়ারের দুই রকম সিগন্যাল মানতে পারেননি চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি। রাগে ফুঁসতে থাকেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। প্রথমে মাঠে থাকা ভারতীয় অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা আম্পায়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এ ব্যাপারে। কিন্তু তা মনঃপুত হয়নি ধোনির।
আর সইছিলো না দেখে খেলার মাঝেই ঢুকে পড়েন মাঠের মধ্যে। প্রথমেই এগিয়ে যান লেগ আম্পায়ার অক্সেনফোর্ডের দিকে। সেখানে আসেন মূল আম্পায়ার গান্ধেও। তাকে দেখিয়ে ধোনি বলতে থাকেন, মূল আম্পায়ার নো বল ডেকেছে, মূল আম্পায়ার নো বল ডেকেছে। কিন্তু এতে সাড়া দেননি অক্সেনফোর্ড। তিনি অটল থাকেন নিজের সিদ্ধান্তে।
বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় ধোনিকে বোঝাতে থাকেন এটি নো বল হয়নি। তখন বোলার বেন স্টোকসও সামনে চলে এলে ছোটখাটো এক বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। আম্পায়াররা বারবার ধোনিকে বোঝালেও অসন্তুষ্টই দেখা যায় ধোনিকে। সিদ্ধান্তেও কোনো বদল আসেনি। ফলে রাগে গজরাতে গজরাতে মাঠ ছেড়ে যান ধোনি।
সে ওভারের পরের দুই বলে ম্যাচ ঠিকই জিতে নেয় চেন্নাই। পঞ্চম বলে লং অন বাউন্ডারির কাছ থেকে ২ রান নিয়ে নেন স্যান্টনার। শেষ বলে তখন বাকি ৪ রান। ওয়াইড করে বসেন স্টোকস। পরের বলে সেই লং অন বাউন্ডারি দিয়েই ছক্কা মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন স্যান্টনার।