বড় চমক দিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল
অবশেষে ঘোষণা করা হলো ১৫ সদস্যের বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল। নানা জ্বল্পনা-কল্পনা শেষে জানা গেলো কোন ১৫ স্বপ্নসারথি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করতে যাবেন। কাদের কাঁধে ভর করে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখবে, সেই ১৫ টাইগারের নাম ঘোষণা করে দিলেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচক। এ সময় তার পাশে বসা ছিলেন অন্য নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান এবং বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে এতদিন যে জ্বল্পনা-কল্পনা তাতে নতুন যোগ হয়েছেন এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক না হওয়া পেসার আবু জায়েদ রাহী। এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় চমকই বলতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স করা এই পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি হলো কেবল ৫টি টেস্ট এবং ৩টি টি-টোয়েন্টি। মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেলের সঙ্গে চতুর্থ পেসার হিসেবেই দলে নেয়া হয়েছে আবু জায়েদকে।
আবু জায়েদ রাহী ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমকের নাম মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, সাইফুদ্দিন। প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং লিটন কুমার দাস।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে দলে নেয়া হবে কি হবে না, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা ছিল। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনীর অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শেখ জামালের বিপক্ষে আবাহনীর ১৪ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেই সেঞ্চুরিই বলতে গেলে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে দিয়েছে মোসাদ্দেককে।
মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসিন রাব্বির নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয়েছে শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ডে ত্রি-দেশীয় সিরিজে। সম্ভাবনাময়ী স্পিনার নাঈম হাসানের নামও ছিল আলোচনার টেবিলে। রাব্বির সঙ্গে তাকেও যোগ করে নেয়া হয়েছে ত্রি-দেশীয় সিরিজের দলে।
ইনজুরির কবলে পড়ে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার পর মাঠে ফিরে আসলেও তাসকিন আহমেদের ওপর আস্থা রাখতে পারলেন না নির্বাচকরা। আগে থেকেই তার ব্যাপারে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের দলে জায়গাই মিললো না তাসকিন আহমেদের। তাকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বকাপ দল। আলোচনায় ছিলেন ২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা শফিউল ইসলামও। কিন্তু প্রিমিয়ার ক্রিকেটে অফফর্মই তাকে ঠেলে দিলো আলোচনার বাইরে।
চিন্তা ছিল সৌম্য সরকারকে নিয়ে। অফ ফর্মের কারণে সৌম্য সরকার দলে থাকবেন কি থাকবেন না, তা নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা। এমনকি প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগের প্রথম ম্যাচেও মাত্র ২ রান করে আউট হয়েছেন সৌম্য। তবুও শেষ পর্যন্ত তাকে রাখা হলো বিশ্বকাপের দলে। একটাই কারণ, অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার কারণেই মূল্যায়িত হয়েছেন তিনি।
প্রিমিয়ার ক্রিকেটসহ সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন পেসার সাইফুদ্দিন। এই তো সর্বশেষ প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ৬ ওভারে ২ মেডেন ও ৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। মোট ৯ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৭ টি। ব্যাট হাতেও দারুণ সফল তিনি। ৭ কিংবা ৮ নম্বরে নেমে ঝড় তুলতে পারঙ্গম। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোট ৩টি ফিফটি করেছেন তিনি। রান করেছেন ৩৬.২০ গড়ে ১৮১। এমন একজন পেস অলরাউন্ডারের বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই না দেয়াটাই যেন হয়ে যাবে অন্যায়।
ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী লিটন দাসই। তার সঙ্গেই তৃতীয় ওপেনার তথা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে সৌম্য সরকার রয়েছেন। লিটনের ফর্ম নিয়ে দুঃশ্চিন্তা থাকলেও বিকল্প না থাকায় তাকেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইমরুল কায়েস কিংবা এনামুল হক বিজয়ের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি নির্বাচকরা। সাত নম্বরে সাব্বির রহমানের জায়গাটা নিশ্চিত হয়েই ছিল।
তিন নম্বর নিয়ে রয়েছে চিন্তা। এ জায়গা কাকে খেলানো হবে? সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, সাকিব আল হাসান নাকি সাব্বির রহমান? আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই হয়তো এ বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট।
দলে রয়েছেন চারজন স্পেশালিস্ট পেসার। মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে অবধারিতভাবেই রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, সাইফুদ্দিন এবং চতুর্থ পেসার আবু জায়েদ রাহী। স্পিন স্পেশালিস্ট একজন মেহেদী হাসান মিরাজ। সঙ্গে রয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেন।
পঞ্চপান্ডব মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গা নিশ্চিতই ছিল। সঙ্গে নিশ্চিত ছিলেন মোস্তাফিজ, মিরাজ, সাইফুদ্দিন, রুবেল হোসেন, লিটন এবং সাব্বির। বাকি জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত সৌম্য, মিঠুন, মোসাদ্দেক, আবু জায়েদ রাহীর সুযোগ মিললো বিশ্বকাপের দলে।
গত প্রায় মাস খানেক ধরে ক্রিকেটপাড়া ও শেরে বাংলার আশপাশে যেসব গুঞ্জন শোনা গেছে তাতে দল সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা জন্মে গিয়েছিলো সবার। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বারকয়েক বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এমনকি একদিন তো তিনি নিজেই ১৫ সদস্যের নাম প্রায় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
এছাড়াও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জাগোনিউজের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছিলেন কারা থাকবেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। আজ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণার পর ১৫ জনের দলেও যেন মিললো সে কথারই প্রতিফলন।