বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি হবেন কোন ১৫ জন
দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। সব দলই নিজেদের গোছাতে ব্যস্ত। কেউ কেউ তো দলও দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশও বিশ্বকাপের দল প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ঘোষণা করা হবে সেই দল। তার আগেই জল্পনা কল্পনা, কারা থাকবে টাইগারদের বিশ্বকাপ দলে! স্বপ্নসারথি হবেন কোন ১৫ জন?
বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বারবার দল নিয়ে কথা বলেছেন, গণমাধ্যমেও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ তামিম ইকবালের সম্ভাব্য ওপেনিং পার্টনার হিসেবে লিটন দাসের সাথে সৌম্য সরকারের বদলে ইমরুল কায়েসের কথা ভাবছেন। আবার কারও কারও পছন্দ এনামুল হক বিজয়।
এবারের প্রিমিয়ার লিগে দারুণ শুরু করা বিজয় মাঝে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন জোরেসোরে। কিন্তু যখনই তাকে নিয়ে হইচই শুরু হলো, ঠিক তখনই নুয়ে পড়লো তার ব্যাট। ঢাকা লিগে শেষ পাঁচ ইনিংসে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে নিজেক মেলে ধরতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার ইনিংসগুলো হলো-০, ২৩, ২৬, ৪, ০।
তামিমের আরেক সম্ভাব্য সঙ্গী ইমরুল কায়েসের ঘরের মাঠে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দু দুটি ম্যাচসেরা হওয়ার কৃতিত্ব আছে। ড্যাশিং তামিমের সঙ্গে ধীরস্থির ইমরুলের জুটিও জমে ভালো। তাদের রসায়নটাও ভালো বলেই গণ্য করা হয়। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, ইমরুলের সেই ব্যাটের ধার আগের মতো নেই। অনেকটাই নিষ্প্রভ, নিস্পৃহ। সঙ্গে ইনজুরি আর ফিটনেসজনিত সমস্যাও আছে। সবমিলিয়ে ইমরুলের সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।
এদিকে লিটন মোটামুটি উৎড়ে গেলেও (শেষ ৫ ইনিংসে মোহামেডানের হয়ে ২৭, ৮৪, ৩৬, ৫৩, ২৪) সৌম্যর অবস্থা বেশ খারাপ। যার ব্যাটে এক সময় চার ছক্কার ফুলঝুরি ছুটতো, রানের নহর বইতো, সেই মারকুটে সৌম্য এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। আবাহনীর হয়ে শেষ পাঁচ ইনিংসে তার রান-১২, ১০, ১৪, ১, ২।
তাই সৌম্যর বিকল্প খোঁজা হয়েছে। কিন্তু সম্ভাব্য বিকল্পদের তিনজন (জহুরুল, বিজয়, ইমরুল) আসল সময়ে জ্বলে উঠতে না পারায় হয়তো আউট অব ফর্ম সৌম্যেই আস্থা রাখতে হচ্ছে নির্বাচকদের।
ওদিকে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ইংলিশ কন্ডিশনে তার সিম বোলিংটাও অল্প বিস্তর কাজে দিতে পারে, এমন ভাবনাও আছে নির্বাচকদের। আবাহনীর হয়ে শেষ কয়েকটি বিগ ম্যাচে বল হাতে বেশ ভালো করেছেন তিনি। উইকেট পেয়েছেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই (শেষ পাঁচ ম্যাচে ৭ উইকেট)।
মোদ্দা কথা, তামিম-লিটনের সাথে হয়তো সৌম্যই থেকে যাচ্ছেন দলে। এছাড়া বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলা ইয়াসির আলী রাব্বিও আছেন বিশেষ বিবেচনায়। প্রথমে ১৫ জনের বিশ্বকাপ দলে থাকার কথা শোনা গেলেও মোসাদ্দেক ঢুকে যাওয়ায় ইয়াসির আলী রাব্বি ১৫ জনের বাইরে চলে গেছেন। তবে তাকে হয়তো আয়ারল্যান্ডে পাঠানো হবে।
এদিকে ১৫ জনের বিশ্বকাপ দলে এবং আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য বাকি ২-৩ ক্রিকেটারের মধ্যেও তাসকিন আহমেদের জায়গা হবে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন। দলে সে অর্থে এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলার নেই। মাশরাফি, সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ-তিনজনই এখন জেন্টাল মিডিয়াম পেসের একটু বেশি গতিতে বল করেন। দ্রুতগতির বোলার বলতে শুধু রুবেল হোসেন। তারও রয়েছে ইনজুরি, সাইড স্ট্রেনের সমস্যা (বুকের পাঁজরের নিচের মাংসপেশীর আশপাশে)।
কাজেই একজন জোরগতির বোলার দরকার। তাসকিনকে দিয়ে সে কাজটা করানোর চিন্তা ছিল নির্বাচকদের। বিপিএলে বল হাতে বারুদ ছড়িয়ে সে সম্ভাবনার আভাসও দিয়েছিলেন ডানহাতি এই পেসার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিপিএল চলার সময়ই গোড়ালি মচকে যায়, যেটা ভুগিয়েছে বেশ।
পুনর্বাসন শেষে মাঠে ফিরেছেন সবে। কিন্তু লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে পুরনো ছন্দ ফিরে পাননি তাসকিন (উত্তরা স্পোর্টিয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলতে নেমে ৫ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য)। পাবার কথাও নয়। পেস বোলারদের ইনজুরি থেকে ছন্দে ফিরতে সময় লাগে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে হয়তো সে সময়টি আর পাবেন না তাসকিন।
ভাবা হচ্ছিল, তাকে আয়ারল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে তিনজাতি আসরে তার পারফরম্যান্স পাখির চোখে পরখ করা হবে। কিন্তু গত কয়েকদিন নির্বাচকদের কথা শুনে মনে হয়েছে, সে সম্ভাবনাও কম। তাসকিনের বদলে প্রথমে শফিউল ইসলাম, প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে ভালো বোলিং করে সর্বাধিক উইকেটশিকারি ফরহাদ রেজা ও আবু জায়েদ রাহিকে সম্ভাব্য বিকল্প ধরে এগিয়েছেন নির্বাচকরা।
এদের মধ্যে শফিউলও ছিটকে পড়েছেন। মোহামেডানের হয়ে তার পারফরম্যান্সও মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। ফরহাদ রেজা ও আবু জায়েদ রাহির মধ্যেই যে কোনো একজনকে বেছে নেয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।
তবে যেহেতু ফরহাদ রেজাও মাশরাফির মতো জেন্টাল মিডিয়াম পেসার, তাই তার বদলে তুলনামূলক দ্রুতগতিতে বল করা রাহির সম্ভাবনাই বেশি।
রাহি ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কিংবা আয়ারল্যান্ডের জন্য বিবেচনায় আছেন এবং হয়তো থাকবেন, আর একদম শেষ মুহূর্তে সংযোজন হতে পারেন অফস্পিনার নাঈম হাসান।
ইংলিশ কন্ডিশনে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও দুজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে যাচ্ছে। এবং প্রায় দলেই একজন করে লেগস্পিনার আছেন। জানা গেছে, কোচ স্টিভ রোডস একজন লেগির অন্তর্ভূক্তি চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মানের লেগস্পিনার না থাকায় বাড়তি অফস্পিনার হিসেবে লম্বা নাঈম হাসানের কথা উঠে এসেছে।
এদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কাঁধের ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপে বোলিং না-ও করতে পারেন, এমন গুঞ্জনও আছে। যেহেতু রিয়াদ সীমিত ওভারের ফরমেটে প্রায় নিয়মিতই বল করেন, তাই তিনি একদমই বল করতে না পারলে বাড়তি অফস্পিনারের অভাববোধ হবেই।
তারপরও মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে থাকবেন মোসাদ্দেক হোসেন। এবারের লিগে আবাহনীর হয়ে ভালো খেলা প্রতিভাবান মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনার ঠেকার কাজ চালাতে পারেন। তার সাথে নাঈমকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ১৫ জনে রাখা হবে কি না? সেটাই দেখার। তবে নাঈমও ১৭ জনে আছেন বলে জানা গেছে।
তার মানে কী দাঁড়াল? একটু মিলিয়ে নিন
মাশরাফি (অধিনায়ক), তামিম, সৌম্য, লিটন, সাকিব (সহ-অধিনায়ক), মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, সাব্বির, মোসাদ্দেক, মিরাজ, সাইফউদ্দীন, মোস্তাফিজ , রুবেল, রাহি/নাইম হাসান।
আয়ারল্যান্ডের বাড়তি দুজন- ইয়াসির আলী রাব্বি, নাইম হাসান/রাহি।