24.4 C
Dhaka
January 30, 2025
Bangladesh

১৫ প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সিরাজ উদ দৌলা

১৫ প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সিরাজ উদ দৌলা

১৫ প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সিরাজ উদ দৌলা

সিরাজ উদ দৌলাহফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নানা অপকর্মের কাহিনি একে একে বের হয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এত অপকর্মের পরও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল কীভাবে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সে। এই চক্রে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী ১৫ নেতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা।

জানা গেছে, যখন যাকে দিয়ে যে অপকর্ম চাপা দেওয়া যায়, তখন তাকে ব্যবহার করতো সিরাজ উদ দৌলা। এদের ব্যবহার করেই প্রায় ১৮ বছর ধরে মাদ্রাসায় ও মাদ্রাসার বাইরে নিজের প্রভাব ধরে রেখেছিল এককালের এই জামায়াত নেতা। আর সুবিধা আদায়ের জন্য এই রাজনৈতিক-প্রশাসনিক চক্রটিকে সে নিয়মিত মাসোহারা ও উপঢৌকন দিতো।

সরেজমিনে সোনাগাজীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে।

১৫ প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সিরাজ উদ দৌলা
১৫ প্রভাবশালীর শেল্টারে ছিল সিরাজ উদ দৌলা

তারা জানান, নিহত নুসরাত জাহান রাফির ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় আলোচিত চক্রের অনেকের নামই উঠে এসেছে। মামলায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কাউন্সিলর ও মাদ্রাসা কমিটির সদস্য মাকসুদ আলম, আবদুল কাদের, নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীমসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশি অভিযানে আফছার উদ্দিন ও নূরউদ্দিন গ্রেফতার হলেও প্রভাবশালী কাউন্সিলর মাকসুদসহ বাকিরা গা ঢাকা দিয়েছে। এই ঘটনার পর ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রহুল আমীনসহ অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
সিরাজ উদ দৌলাহ (ছবি: ফোকাস বাংলা)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের দাবি, সোনাগাজীতে যখন যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসি বদলি হয়ে আসেন, তাদের সুকৌশলে নিজের প্রভাব বলয়ে ভিড়িয়ে নিতো অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। নানা ধরনের উপহার উপঢৌকন ও খেদমত করে সে সুবিধা আদায় করে নিতো। পরে নানা অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে নিজের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করতো।

সিরাজ উদ দৌলার প্রশ্রয়দাতা চক্রের অন্যতম প্রভাবশলী ব্যক্তি রুহুল আমীনের সঙ্গে কথা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি এখন ভোল পাল্টিয়েছেন। রুহুল আমীন বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ একজন নষ্ট ব্যক্তির নাম। এর পক্ষে আমি কখনও ছিলাম না।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, নুসরাতকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে গত ২৭ মার্চ সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচিতে নামলে কাউন্সিলর মাকসুদ অধ্যক্ষের অনুগত লোকদের নিয়ে বাধা দেয়।মারধর করে আরেক কাউন্সিলর মামুনকে। এতে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর সোনাগাজী সদরে আর কোনও কর্মসূচি পালিত হয়নি।

স্থানীয়রা আরও জানান, অধ্যক্ষের যেকোনও অপকর্মের দোসর ছিল ওই একই মাদ্রাসার দুই ছাত্র নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন। নুসরাতের গায়ে ২০১৭ সালে একবার চুন নিক্ষেপ করেছিল নূরউদ্দিন। সে এখন গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে আছে, আর শাহাদাত পলাতক।

সোনাগাজীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করেন, বিএনপি জোট সরকারের আমলে সিরাজ উদ দৌলাকে যারা শেল্টার দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছেন— স্থানীয় পৌর বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন গঠন, জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া, ছালেহ আহমেদ, মোহাম্মদ মোহসীন। বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বিপদে পড়ে এদের ছত্রছায়ার আশ্রয় নিতো অধ্যক্ষ সিরাজ।

তবে বিএনপির নেতা আলাউদ্দিন গঠন অধ্যক্ষ সিরাজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্তীকার করে বলেন, ‘সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে কোনও সময় আমি হয়তো তাকে সহায়তা করেছিলাম। কিন্তু তার কোনও অপকর্মে আমার সমর্থন নেই, ছিলও না।’

সোনাগাজী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবদুল হালিম জানান, ‘মাদ্রাসার দোকানপাট ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিমাসে তিন লাখ টাকা আয় হয়। আয়ের বড় অংশ অধ্যক্ষ সিরাজ তার অনুগতদের জন্য ব্যয় করে। এ কারণে নানা অভিযোগ ওঠার পরও স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে নিরব ভূমিকা পালন করে। যে কারণে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাকে শুরুতে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, ‘গতবছর ৩ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আলিম শ্রেণির আরেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে। প্রতিকার চেয়ে মেয়েটির বাবা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। চিঠির অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছেও দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং যে তিনজন শিক্ষক অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় অধ্যক্ষ। ওই তিন শিক্ষক হলেন— আরবি বিভাগের প্রভাষক আবুল কাশেম এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বেলায়েত হোসেন ও হাসান।’

আবুল কাশেম এ বিষয়ে বলেন, ‘মাদ্রাসার ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে অধ্যক্ষের কাছে তার ঘনিষ্ঠ লোকদের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়, যার মধ্যে আমিও আছি। ফলে আমরা তার অপকর্মের কথা বলতে সাহস পাই না। ফলে আগের ওই শ্লীলতাহানির ঘটনাটিও চাপা পড়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় সে নুসরাতের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পেরেছে।’

ইউএনও মো. সোহেল পারভেজ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘অধ্যক্ষের চরিত্র নিয়ে এখন অনেক অভিযোগ উঠে আসছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর মামলা হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিকে এনামুল করিম বলেন, ‘মাদ্রাসার দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছিল, এটি সত্য। কিন্তু এগুলো যাছাই-বাছাই করাটা আমার পক্ষে কঠিন ছিল। তারপরও আমি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য কারও সহযোগিতা পাইনি। এখন তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

Related posts

নুসরাতকে ছাদে ডেকে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেন পপি

Lutfur Mamun

নোয়াখালীর ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৩) বাড়িতে পৌঁছে গণধর্ষণ

Lutfur Mamun

করোনাভাইরাস আপডেট ও সর্বশেষ খবর || রোববার, ০২ মে ২০২১,১৯ বৈশাখ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ||

Lutfur Mamun

Leave a Comment