নায়ক ফেলুকওয়ায়ো ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং-বোলিংয়ে প্রোটিয়াদের জয়ের
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে এলোমেলো করে দিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং। ফিল্ডিংয়ে নিলেন দুটি ক্যাচ। রান তাড়ায় দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে নেমে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো যেন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। রাসি ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে গড়লেন ম্যাচ জেতানো অসাধারণ জুটি। ব্যাটে-বলে লড়াই করলেও পেরে উঠল না পাকিস্তান। দারুণ জয়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সমতা ফিরিয়েছে ৫ ম্যাচের সিরিজে।
ডারবানে মঙ্গলবার পাকিস্তানকে ২০৩ রানে আটকে রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফেলুকওয়ায়ো ৪ উইকেট নেন ২২ রানে।
রান তাড়ায় ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় ফন ডার ডাসেন ও ফেলুকওয়ায়োর অবিচ্ছিন্ন জুটিতে। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৬৯ রানে অপরাজিত থাকেন ফেলুকওয়ায়ো। অভিষেক ওয়ানডেতে ৯৩ রানে আউট হওয়ার পর ফন ডার ডাসেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অপরাজিত থেকে যান ৮০ রানে।
কিংসমিডে ম্যাচটির লাগাম হাতবদল হয়েছে অনেকবার। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান ধুঁকেছে শুরু থেকেই। নতুন বলে কাগিসো রাবাদা ফিরিয়ে দেন ইমাম-উল-হক ও বাবর আজমকে। মিডল অর্ডারে দুই অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজকে ফেরান ফেলুকওয়ায়ো।
সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য বোলাররাও উইকেট শিকারে যোগ দিলে পাকিস্তান ১১২ রানেই হারায় ৮ উইকেট।
অপেক্ষা যখন তাদের ইনিংস শেষের, নবম উইকেটে তারা ঘুরে দাঁড়ায় অবিশ্বাস্যভাবে। দশে নামা হাসান আলি আগ্রাসী ব্যাট করে চমকে দেন প্রোটিয়া বোলারদের। হাসানকে দারুণ সঙ্গ দেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। দুজনের জুটি পাকিস্তানকে নিয়ে যায় দুইশ ছাড়িয়ে।
এই জুটিতেও ছোবল দেন ফেলুকওয়ায়ো। শততম ওয়ানডে খেলতে নামা সরফরাজ আউট হন ৫৯ বলে ৪১ রানে। ভাঙে নবম উইকেটে ৯০ রানের জুটি।
সঙ্গীকে হারানোর পর হাসানের ব্যাটও খেমে যায় দ্রুত। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ফিফটিতে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৫৯ করে ফেরেন ৪৫ বলে। হাসানকে ফিরিয়ে চতুর্থ শিকার ধরেন ফেলুকওয়ায়ো।
আগেও দুইবার ওয়ানডেতে চার উইকেট পেয়েছিলেন এই পেসার। তবে ২২ রানে ৪ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা।
তখনও ভাবা যায়নি, এই রান তাড়ায় ব্যাট হাতেও এত বড় ভূমিকা রাখতে হবে তাকে। কিন্তু পাকিস্তান শুরুতেই কাঁপিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপকে।
প্রোটিয়াদের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১৮ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার দ্রুতই বিদায় করে দেন রিজা হেনড্রিকস, হাশিম আমলা ও ফাফ দু প্লেসিকে। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ২৯।
তিনে নামা ফন ডার ডাসেন প্রতিরোধ গড়েন ডেভিড মিলারকে নিয়ে। চতুর্থ উইকেটে দুজন গড়েন ৫১ রানের জুটি। কিন্তু মিলার ও হাইনরেখ ক্লাসেনকে পরপর দুই বলে ফেরান লেগ স্পিনার শাদাব। ম্যাচ আবারও হেলে পড়ে পাকিস্তানের দিকে।
কিন্তু একটু একটু করে সেই ম্যাচ আবার বের করে আনেন ফন ডার ডাসেন ও ফেলুকওয়ায়ো। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে হলেও পরিস্থিতি বুঝে দারুণ পরিণত ব্যাট করেন ফন ডার ডাসেন। ফেলুকওয়ায়ো শুরুতে একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও পরে খেলেছেন সহজাত আগ্রাসী সব শট।
এই দুজনকে ফেরানোর পথ পায়নি পাকিস্তান। আগের সেরা ৪২ ছাড়িয়ে ফেলুকওয়ায়ো পান প্রথম ফিফটি। তার পর একটি সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি শাদাব খান। ম্যাচ তখন এমনিতেও দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালে। শেষ পর্যন্ত জয় ধরা দিয়েছে ৮ ওভার বাকি রেখেই।
ফেলুকওয়ায়োর ৬৯ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ২ ছক্কা। গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৫৬ রানের পর ২৯ বছর বয়সী ফন ডার ডাসেন ক্যারিয়ারে প্রথম দুই ওয়ানডেতে করলেন ৯৩ ও অপরাজিত ৮০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৫.৫ ওভারে ২০৩ (ইমাম ৫, ফখর ২৬, বাবর ১২, হাফিজ ৯, মালিক ২১, শাদাব ১৮, তালাত ২, সরফরাজ ৪১, ফাহিম ০, হাসান ৫৯, শাহিন শাহ ১*; রাবাদা ২/৩৫, প্যাটারসন ০/৩৭, অলিভিয়ের ১/৫১, ফেলুকওয়ায়ো ৪/২২, শামসি ৩/৫৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪২ ওভারে ২০৭/৫ (হেনড্রিকস ৫, আমলা ৮, ফন ডার ডাসেন ৮০*, দু প্লেসি ৮, মিলার ৩১, ক্লাসেন ০, ফেলুকওয়ায়ো ৬৯*; ফাহিম ০/৩২, শাহিন শাহ ৩/৪৪, হাফিজ ০/৩৬, হাসান ০/৩১, শাদাব ২/৪৬, তালাত ০/১৬)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো