ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনার আগে সংঘাতে টেরিজা মে
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) সামনে আগানোর পথ খুঁজতে আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন এবং ইইউ’য়ের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন।
চুক্তি-বিহীন ব্রেক্সিট না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে মে’র সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে বিরোধীদল লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিনের। ওদিকে, ব্রেক্সিট চুক্তিটি পরিবর্তনের জন্য এটি নিয়ে পুনরায় আলোচনার পথে হাঁটতে গিয়ে ইইউ’র সঙ্গে মে’র বিরোধ বেধেছে।
ইইউ আগের ব্রেক্সিট চুক্তিতেই অটল রয়েছে। তারা চুক্তিটি নিয়ে ফের আলোচনায় যেতে নারাজ। ওদিকে, চুক্তি-বিহীন ব্রেক্সিট নাকচ না হওয়া পর্যন্ত মে’র সঙ্গে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনায় বসতেই চাননি জেরেমি করবিন। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমপিরা চুক্তি-বিহীন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পর মে’র সঙ্গে আলোচনায় রাজি হন করবিন।
পার্লামেন্টের অধিবেশনে করবিন বলেন, “ মে হয়ত তার পরিকল্পনায় সংশোধনীর ওপর ভোটের মাধ্যমে সাময়িকভাবে তার বিভক্ত দলে একতা ফিরিয়েছেন। কিন্তু দেশকে একতাবদ্ধ করতে হলে তাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপোস করতে হবে।”
ওদিকে, “মে বলেন, করবিন এখন কেবলমাত্র তার সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়েছেন। তবে এটুকু করেও তিনি অন্তত অভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করেছেন, সেটি ভাল ব্যাপার।” কিন্তু করবিনও যে দেশের জন্য ভাল কোনো ব্রেক্সিট পরিকল্পনা দাঁড় করাতে পারেন নি সেকথা স্মরণ করিয়ে দেন মে।
তিনি বলেন, তার (মে) ব্রেক্সিট চুক্তি এমপি’রা আটকে দিলেও করবিনের ব্রেক্সিট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। “তার (করবিন) ব্রেক্সিটের কোনো পরিকল্পনা নেই। দেশের অর্থনীতির জন্য এমনকি দেশের জন্যও করবিন কোনো ভাল পরিকল্পনা দিতে পারেন নি।”
মে’র ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টের ভোটে পাস না হওয়ার পর দু’সপ্তাহের মাথায় আইনপ্রণেতারা আবারো বিতর্কিত ‘আইরিশ ব্যাকস্টপ’ এর বিষয়টি পরিবর্তন করার জন্য ব্রাসেলসের সঙ্গে মে’কে নতুন করে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন এতে রাজি নয় বলে জানিয়েছে। ওদিকে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব দাবি করেছে ইইউ সদস্য ফ্রান্স।
ইইউ নেতাদের সঙ্গে প্রায় দুই বছর আলোচনার পর গত নভেম্বরে মে সম্পর্কোচ্ছেদের পথরেখা হিসাবে ব্রেক্সিট চুক্তিটি করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে তা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিপুল ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়।
আধুনিক যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রস্তাব পার্লামেন্টে এরকম ভারাডুবির মুখে পড়েনি। ওই পরাজয়ের পর মে’কে আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হয়, আস্থা ভোটে সাফল্যের সঙ্গেই উৎরে যান তিনি।
প্রথম পথরেখা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বেশ কিছু রদবদল করে মঙ্গলবার বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে পার্লামেন্টে হাজির হয়েছিলেন মে। যেসব ক্ষেত্রে এই রদ-বদল করা হয় তার অন্যতম হচ্ছে ‘ব্যাকস্টপ’। ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নর্দান আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সীমান্তই এ ‘ব্যাকস্টপ’ এর মূল আলোচ্য বিষয়।
‘ব্যাকস্টপ’ নিয়ে শক্ত অবস্থানে থাকবেন শর্তে মের বিকল্প পরিকল্পনা মঙ্গলবার পার্লামেন্টে অনুমোদন পায়। ৩১৭ জন এমপি মে’র পক্ষে ভোট দেন। পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়া ওই বিকল্প পথরেখা নিয়েই এখন ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান মে।
পার্লামেন্টে তিনি বলেন বলেন, “ইইউতে এ ধরনের পরিবর্তনের সুযোগ খুবই কম এবং তাদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা সহজ হবে না।” ওদিকে, ইইউ নেতারাও নতুন করে আলোচনায় বসবেন না বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। তবে জার্মানি এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। মের হাতে সময় দুই মাসেরও কম।
এ অবস্থায় মে কোনো চুক্তি ছাড়াই সম্পর্কোচ্ছেদের হুমকি দিয়ে বিকল্প পরিকল্পনায় ইইউ নেতাদের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।