মুখোমুখি মাশরাফি-মুশফিক, সাকিব-মিরাজ
অফিসিয়াল ফটোসেশন শেষ করে মাত্রই তখন একাডেমি মাঠে ঢুকলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুক্রবার দুপুরে সেই সময়ই মাঠে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের কথা শেষ হতেই এগিয়ে গেলেন মাশরাফি। জড়িয়ে ধরে চলল হাসি, আড্ডা, খুনসুটি। একটু পর একই রকম দৃশ্য মাঠের আরেক প্রান্তে। সাকিব আল হাসানকে দেখে এগিয়ে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জড়িয়ে ধরে, হাত মিলিয়ে চলল কথোপকখন। তবে এই সৌহার্দ্য, এই হৃদ্যতা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যেতে হবে পরদিন, মাঠের ক্রিকেটে তারাই যে প্রতিপক্ষ!
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রথম দিনে শনিবার প্রথম ম্যাচে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স খেলবে মুশফিকের চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রতিপক্ষ মিরাজের রাজশাহী কিংস। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু প্রথম ম্যাচ, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে দ্বিতীয়টি।
টি-টোয়েন্টিতে যদিও ফেভারিট বলে কিছু নেই, তবে দলীয় শক্তির বিচারে প্রথম ম্যাচে অনেকটাই এগিয়ে রংপুর। মাশরাফির নেতৃত্বে গত আসরে শিরোপা জিতেছিল দলটি। এবার তাদের শক্তি বাড়ানো হয়েছে আরও। গতবার শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখা ক্রিস গেইলের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে এবার আরও দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অ্যালেক্স হেলসকে। ডি ভিলিয়ার্স অবশ্য শুরুর ম্যাচগুলোতে থাকছেন না, প্রথম ম্যাচে গেইলকে পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তবে আছেন হেলস।
হেলসের সঙ্গে আরেক ইংলিশ ক্রিকেটার রবি বোপারা ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশোর একাদশে থাকা একরকম নিশ্চিত। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী চতুর্থ বিদেশি হবেন পেসার বেনি হাওয়েল কিংবা জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামসের কেউ।
সেই তুলনায় চিটাগং শক্তিতে পিছিয়ে অনেকটাই। অধিনায়কত্ব করবেন যিনি, সেই মুশফিকুর রহিমকে দলে নিয়েছিল তারা নিলামের কিছুক্ষণ আগে। বিদেশিদের মধ্যে বড় ভরসা ছিল যার ওপর, সেই লুক রনকিকেও তারা পাচ্ছে না। আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ, জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজার সঙ্গে দেশের মুশফিক-মোসাদ্দেকরাই ভরসা।
তবে টি-টোয়েন্টি বলেই কাগজে-কলমের হিসেবে বিশ্বাস নেই মাশরাফির। রংপুর অধিনায়ক ম্যাচের আগের দিন যথেষ্টই সমীহ করলেন প্রতিপক্ষকে।
“প্রথম ম্যাচ সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে দুই-একজন ক্রিকেটারই ম্যাচ বদলে দিতে পারে। নিদাহাস ট্রফির কথাই চিন্তা করুন, মুশফিক একাই ম্যাচ জিতিয়েছে। দল খুব ভালো হলেই যে কোনো ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জেতা যাবে, এই ধারণা ভুল।”
“ওদের দলও যথেষ্ট শক্তিশালী। টুর্নামেন্টের সাতটি দলই আসলে শক্তিতে কাছাকাছি। খুব বড় পার্থক্য পাওয়া কঠিন। আমার মনে হয়, খুব ভালো খেলা হবে এবার।”
প্রতিপক্ষকে শ্রেয়তর মানলেও টি-টোয়েন্টি বলেই আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই চিটাগং অধিনায়ক মুশফিকের।
“প্রথম ম্যাচ, সবাই চায় ভালোভাবে শুরু করতে। আমরাও চাই। আমরা যাদের সঙ্গে খেলব, তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু সবাইকে নতুন করেই শুরু করতে হবে। কাগজে-কলমে আমাদের দল খুব শক্তিশালী না হলেও আমাদের কয়েকজন কার্যকর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার আছে। যাদের নিয়ে আমরা খুব ভালো একটা ম্যাচ দিয়ে আসর শুরু করতে পারব বলে আমি আত্মবিশ্বাসী আছি।”
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচের বাস্তবতাও প্রায় একই। শক্তিশালী ঢাকার সঙ্গে লড়বে তারুণ্য নির্ভর রাজশাহী। দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিবের নেতৃত্বে ঢাকা দলে আছেন সুনিল নারাইন, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেলের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব তারকারা। আছেন ইয়ান বেলের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, রুবেল হোসেন, নুরুল হাসানদের মতো পরীক্ষিত নাম। শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করতে চাইবে তারা জয় দিয়ে।
রাজশাহী দল গঠনে ঝোঁকেনি দেশি-বিদেশি বড় নামের দিকে। ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার মিরাজকে দেওয়া হয়েছে দলের নেতৃত্ব। ভরসা তাদের সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, জাকির হাসানদের ওপর। বোলিংয়ের মূল বড় ভূমিকা রাখতে হবে দুই বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমান ও আরাফাত সানিকে।
বিদেশিদের মধ্যে দল তাকিয়ে থাকবে মোহাম্মদ হাফিজ ও রায়ান টেন ডেসকাটের দিকে। দুজনেরই বয়স পেরিয়ে গেছে ৩৮। তবে এখনও হতে পারেন দারুণ কার্যকর। দক্ষিণ আফ্রিকার আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ক্রিস্টিয়ান ইয়োঙ্কার ও ইংল্যান্ডের গত টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে সর্বোচ্চ রান করা লরি ইভান্সকে জয় করতে হবে কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ।
ক্রিকেটীয় শক্তিতে ঢাকার সঙ্গে যে পার্থক্য, রাজশাহী সেটি ঘুচিয়ে দিতে পারে টিম স্পিরিট দিয়ে। গত দুই আসরে এটিই ছিল রাজশাহীর বড় শক্তি। নতুন অধিনায়ক মিরাজ দলকে সেই স্পিরিটে কতটা উদ্ধুদ্ধ করতে পারেন, দেখার হতে পারে সেটিই।
প্রথম দিনে তাই উত্তেজনার রসদ মজুদ আছে যথেষ্টই। অপেক্ষা কেবল ক্রিকেট মাঠে গড়ানোর।
সূএ- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর