হেরে গেলেও গর্বিত করল সুনীলের ভারত
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দুটো ব্যাপার মনে হচ্ছিল। প্রথমটা, স্কোরলাইনটা হজম করা যাচ্ছে না। আর দ্বিতীয়টা হল, মনঃসংযোগ আর বোঝাপড়ার অভাবের শিকার হলাম আমরা।
পাঁচটা চান্সকে যদি ব্যাখ্যা করি, তা হলে পুরো ম্যাচ ফুটে উঠবে চোখের সামনে। সুনীল পাস থেকে আশিকের নেওয়া শট আমিরশাহি কিপার সেভ করল। কিছু পরেই অনিরুদ্ধের ক্রস থেকে সুনীলের হেডটাও। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে আর এক বার সুনীলের মিস। একটুর জন্য সামান্য বাইরে দিয়ে গেল।
পরের দুটো সুযোগ সেকেন্ড হাফে। এক বার উদান্তার নেওয়া শট ক্রসপিসে লেগে ফিরল। একেবারে শেষ দিকে আর একবার একই ঘটনা। রাওলিনের ক্রস থেকে সন্দেশের হেড ফের লাগল ক্রসপিসে।
ফুটবল সুযোগ কাজে লাগানোর খেলা। যে যতটা পারে, তার জেতার সম্ভাবনা তত বেশি। আক্ষেপটা এখানেই। আমিরশাহির থেকে অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করেও ম্যাচটা হেরে গেল ভারত। আমি তো বলব, ক্রসপিস আর কিপারের হাত বাঁচাল আরব আমিরশাহিকে।
এই রকম ম্যাচে, যেখানে চাপের সামনে দিশেহারা দেখাচ্ছে প্রতিপক্ষকে, সেখানে পাল্টা আক্রমণে অনেক সময় বিপদ হয়। সেটাই হল ভারতের ক্ষেত্রে। আমিরশাহির কাউন্টার অ্যাটাকের সময় দু’বারের জন্য নড়ে গেল ফোকাসটা। মনঃসংযোগে ব্যাঘাত হল, তালমিল ঘেঁটে গেল সাময়িক। তাতেই দুটো গোল খেয়ে গেলাম আমরা। না হলে, ভারতের পাঁচটা ওপেন চান্সের পরও বলছি, ডিফেন্স যদি সামলে রাখা যেত ওই দুটো ক্ষেত্রে, ম্যাচটা গোলশূন্য শেষ করতে পারত সুনীলরা।
মনখারাপ সরিয়ে রাখলে এই ম্যাচ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। এশিয়ায় আমিরশাহির র্যাঙ্কিং ৬। ভারতের ১৫। ফারাক বেশ বড়। কিন্তু মাঠে সেটা সমানে সমানে বললে ভারতকে ছোট করা হবে। বরং বলা উচিত, ভারত অনেক দিক থেকে আমিরশাহির থেকেও এগিয়ে।
ইচ্ছে, টিমের শেপ, ইউনিটি, ফাইট, মনোবল, ভাবনা- এই রকম কিছু বিষয়ের উপর একটা টিম দাঁড়িয়ে থাকে। ভারত সব বিভাগেই ভালো মার্ক পাবে। কিছু কিছু দিকে বেশ ঝলমলে। একটা প্রতিভাবান, কঠিন, যে কোনও মুহূর্তে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে, এমন টিমের বিরুদ্ধে খেলতে নামা সত্ত্বেও সুনীল-সন্দেশরা চোখে চোখে রেখে খেলেছে। প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করেছে। বল দখলে রাখার চেষ্টা করেছে। গোল করার তাগিদ দেখিয়েছে। এই ভারত সত্যি পাল্টে গিয়েছে। আমার গর্ব হচ্ছে সুনীলদের খেলা দেখে।
একটা প্রশ্ন আপাতত ঘুরছে, ভারত কি নক আউটে যাবে? বাহরিনকে ১-০ হারাল থাইল্যান্ড। ভারত আবার হারল আমিরশাহির কাছে। এখন যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে আমিরশাহির ৪, ভারত ও থাইল্যান্ডের ৩ করে। আমি বলব, এ সব অঙ্কের কথা না ভেবে সামনে দেখুক সুনীলরা। ভুলে যাক এই ম্যাচের ফল। শুধু মনে রাখুক লড়াইটা। এই অসাধারণ লড়াকু ফুটবলই আবার বাহরিনের বিরুদ্ধে সাহসী ম্যাচ খেলার খোরাক জোগাবে।
ভারত: গুরপ্রীত, প্রীতম, সন্দেশ, আনাস, শুভাশিস, উদান্তা (জ্যাকি ৮০), প্রণয়, আশিক, অনিরুদ্ধ (রাওলিন ৭০), হোলিচরণ (জেজে ৪৬), সুনীল।